পুতুলের বিয়ে...!

 পুতুলের বিয়ে....!


★----স্বরবৃত্ত

চৈত্র মাসের শেষ যখনি 

বৈশাখেরি শুরু

কৃষকেরো মনটা খুশি 

বুকটা ভয়ে ভীরু।

ফসল যতোই হোকনা ভালো

আছে জমিতে

দুর্যোগের ভয় কৃষক মনে 

থাকে ঘুরিতে। 

তাইতো বলে মা কাকিরা 

থেকোনা আর হেলায়

হাসবে যখন ধান গোলাতে 

আর তিল দেখবে ছালায়। 

আকাশ জুড়ে কখনো মেঘ 

কখনো ঝাঝা রোদ

কখনো হয় ভীষণ বাতাস 

কখনো হয় বিরোধ।

হতাশা আর স্বপ্ন যেনো 

টাকার এপিট ওপিট

একের সাথে অন্য এসে 

হবেই উপস্থিৎ।

কৃষক যতো তাইতো সবাই

আছে ভীষণ ব্যস্ততায়

কার আগে কে তুলবে ফসল 

আঙ্গিনার ওই উচ্ছতায়।।



★--স্বরবৃত্ত

তারাপদ আর হিরামন

দুজন প্রতিবেশি,

নিজের জমি চাষ করে খায়

চলছে হাসি খুশি।

সময় পেলে অন্যের ক্ষেতে

খাটে দিনমজুর,

এমনি করে নিচ্ছে সংসার

উপরের হুজুর। 

বড় মেয়ে সিক্সে পড়ে 

ছোট্ট ক্লাস ওয়ানে, 

খুশির ঝলক উপছে পড়ে

রোজ দিবসের বিয়ানে।

এক ঘরেতে সবাই মিলে 

কষ্টে করে বাস,

উঠান পাশে চালের হেসেল

খুটিতে নাই বাঁশ।

লোনের টাকায় গরু কিনে

রাখা ওন্য ঘরে,

ফাঁকা যায়গায় ফসল গুলো

রাখবে থরে থরে।

বড় মেয়ের নামটি সোনা

ছোট্ট মেয়ে রুপা

সুখে চালায় দুঃখের সংসার 

বৌ যে সুতপা।। 



★--স্বরবৃত্ত

দশের লাঠি একের বোঝা

জানে সর্বজনে,

বারো জোড়া নারকোলে, ঘাড়

ভাঙ্গে তেরো জনে।

দুটোই কিন্তু নীতি কথা

মিথ্যে কভু নয়,

সমিতিতে ধনীদের লাভ

গরীবের হয় ক্ষয়।

বছর শেষে কিছু লোকে

পকেটে ভরে লাভ,

বাকিরা সব জীবন কাটায়

মাথায় লোনের চাপ।

চাইলে টাকা না বলেনা

রাখেনা জামানত,

তিন টাকা হার সুদ ভুলে সব

দেখে যে ভবিষ্যৎ।

ছেলের চাকরি মেয়ের বিয়ে

কিংবা অসুস্থতা,

টাকা নিয়ে ভাবনা তো নেই

নেই কোন ব্যস্ততা। 

ঘরে ঘরে পৌছে গাভী

পৌছে মাছের খাবার,

যখন যা চাই সমিতিতে

মিলছে এখন সবার।

গেলো বছর হিরু নিলো

ছোট্ট একটা বকনা

দুঃখের দিন শেষ হবে তার

বছর দু-এক যাকনা। 

হিরুর মতো যতো হিরু

আছে এইনা ভবে,

সাবালকের স্বপ্ন তাঁরা

সাবলকি হবে।।


★--- স্বরবৃত্ত

গতো তিন দিন কাঁটলো হিরু

তারাপদের ধান,

আজ বিকেলে একটু ফাঁকা

তাইতো অন্য প্লান।

কদিন পরেই বৃষ্টি নামবে

ঘেরে হবে জল, 

ঘেরের পাড়ে এখন সময় 

লাগাবে ফসল। 

তাইতো হিরু লাউ কুমড়া আর 

করলার বীজ কিনে, 

ধানের কাজের ফাঁকে ফাঁকে

গাড়ছে দু-একদিনে।

উলুধ্বনী আযান আসে

কাজের হয়না শেষ,

এখন একটু কষ্ট করলে

কাঁটবে সময় বেশ।

মেয়ে দুটো বড় হচ্ছে

ভাবনা তাই বেশি

মেয়ে দুটো সুখি হলে

স্বার্থক হবে পেশি।


★---ত্রিপদী-৬+৬+৮

ফুরফুরে মেজাজে       

ঘরে ফিরে সাঁঝে

হিরুর চোখ গেলো কপালে, 

লেখা নাই পড়া নাই      

অালস্যে বসে ঠাই

মেয়েরা খেলছে অকালে।

সন্ধ্যায় বাড়ি বসে     

বই পড়ে সবশেষে

খেয়ে দেয়ে দিবি এক ঘুম, 

দিনের আলোয় বসি       

খেলুক ইচ্ছে খুশি

পুতুল বিয়ের লেগে যাক ধুম।

সে সব হায়,বাদ দিয়ে      

সন্ধ্যায় পুতুল নিয়ে

এসব হচ্ছে কি কারবারি!

পিটিয়ে আজ বৌ তোর     

ভাঙ্গবো অজ্ঞানের ঘোর

বুঝাবো কোনটা দরকারি।

বেঁধে গেলো গোলমাল     

কটাক্ষের বোলচাল

সোনা গিয়ে বসলো পড়তে,

পুতুল নিয়ে কাঁধে      

রূপা ভয়ে কাঁদে 

পারেনা সে এক পা নড়তে।

কিছু সময় পরে 

হিরু দেখে ঘরে

রুপা কাঁদে ওই আড়ালে,

চোখে মুখে ভয় তার

আচানক ব্যবহার

শুরু করে হাত বাড়ালে।

কতো কিছু বলে

ছলে বলে কলে

অবশেষে রুপা হয় শান্ত,

বাবাকে সে বলে

পুন কোন ছলে

বিয়ে ভেঙ্গে দেবে নাতো?

স্নেহে কাতর হয়ে

তাঁরে বুকে লয়ে

হিরু বলে না দেবোনা,

সোনাদি কে নিয়ে 

চলো দেখি গিয়ে

মা কি যে করেছে রান্না।।



★--পয়ার

সকাল না হতে হতে মাঠ পানে ছোটে

কাঠা দুই কাটা হলে বেলা তবে ওঠে।

খাবার দাবার দিয়ে গেলো এসে বউ

কাঁকড়ার তরকারি সাথে আছে লাউ।

হিরু আর তাঁরা মিলে খেয়ে নিয়ে ভাত

ধান কেটে দিন শেষে বাড়ি ফিরে রাত।

তিন দিন হলো কাটা আরো লাগে দুই

পাজা পাজা ধান যেনো সোনা ভরা ভুই।

সব ধান কেটে তবে আঁটি বেঁধে ঘরে

নিয়ে যাবে একে একে দিন দুই পরে।

এমনি খুশিতে ধান কাটে আর বলে

মেঘের যে অবস্থা কি আছে যে ভালে!

মাঠ জুড়ে ধান কাটা সারা বিলে ধান

ফসলের মাঝে থাকে কৃষকের প্রাণ।

বাড়ি ফেরার সময় দেখে দুইজনে

ঝগড়া করছে ওরা কালু আর ঝনে।

ধান খেয়েছে কালুর পোষা বকরিতে

ঝনে তাই দিতে চায় ঘেরা চকরিতে।

চাঁদা দিয়ে সাঁজা খেটে হোক তবু শিক্ষা

বকরির ক্ষতি থেকে ধান পাবে রক্ষা।

হিরু আর তারা মিলে মেটায় ঝামেলা

মাপ করে-দে কালুকে এইতো পহেলা।

যেতে যেতে বৃষ্টি নামে মুসল ধারায়

ভিজে ভিজে ঘরে ফেরে সে হিরু তারায়।

খড়ের ছাউনি ঘরে জল পড়ে গায়

কোথা যাবে কি করবে নাই তো উপায়।

সোনা আছে মার সাথে ছোট যে অবুজ

পুতুল খেলায় মজে খুশিতে সবুজ।

বাবা বলে ওরে ছোট এসো বসো কোলে

বড় হলে দেবো তোরে বড় ইসকুলে।

ছোট বলে ওগো বাবা তুমি যে বুঝোনা

পুতুল খেলতে দেখে করো শুধু মানা।







★--স্বরবৃত্ত

বৃষ্টি শেষে, ভোর বেলাতে, 

কৃষক ছোটে মাঠে

জানেনা কেউ কি আছে হায়

ঘটবে আজি নাটে(রঙ্গমঞ্চ)।

জলের উপর ফসল ভাসে

একতাল জল জমিতে,

দেখে হিরুর মাথায় হাত

লুটিয়ে পড়ে ভূমিতে।

সারা বছর কি খাবে হায়

চোখে দেখে অন্ধকার,

আকাশ ডাকে পাখি ডাকে

হিরুই শুধু নির্বিকার।

খাবার যদি ঘরে থাকে

স্বর্গ হবে ধরা,

খাবার তরেই জীব জগতের

এতো কিছু করা।

মানুষ একটু ভিন্ন বটে

অসীম তাদের অভাব,

পশুর সাথে মানুর কেবল

ভিন্ন একটু স্বভাব।

পেটের ক্ষুধা মিটলে পরে

পশুরা হয় শান্ত,

মানুষ কভু হয়না শান্ত

ক্ষুধা অফুরান্ত।

খাবারের নাই ভাবনা যার

বিলাসে ভরে মন,

অশুভ সব চিন্তা তাদের

কুরে খায় সারাক্ষণ।

হিরু তো হায় গরীব কৃষক

বাঁচার জন্য খায়,

বছর যাবে কেমন করে

জানেনা উপায়।


★মাত্রাবৃত্ত....

একটি মাত্র সম্বল নিয়ে 

হিরুর দিবস কাটে,

গরুর মাঝেই সুখের স্বপ্ন 

বেচলে ঈদের হাটে।

সুখের স্বপ্ন আর বেশিক্ষণ

রইলোনা তার মুখে,

বিষাধ চিহ্ন মুখের উপর

দাগ কেটে যায় দুঃখে।

গায়ের মোড়ল নন্দ দুলাল

বখাটে পুত্র সৈকত,

ব্যর্থ প্রেমের প্রতিশোধ নিতে

রুপার নিয়েছে ইজ্জত।

হাজার ঘুরে ও কারো কাছে হিরু

পেলোনা মেয়ের বিচার,

উল্টা সবাই নিন্দা রটায়

মিথ্যার করে প্রচার।

সমাজ করেছে একঘরে তাকে

দিয়ে শহস্র অপবাদ,

দুর্দিনে তার আপন সবাই

প্রকাশ্যে করে পদাঘাত।

এমনি নিয়ম সমাজের ভাই

মানুষ গুলাও স্বার্থপর,

সুখের সময় বন্ধু সুলভ

দুঃখের সময় ধুরন্ধর।


স্বরবৃত্ত--

জলে ডুবলো ফসলের ক্ষেত

মেয়ে হারালো ইজ্জত,

সমাজ দিলো নির্বাসনে

অনিশ্চিৎ তার ভবিষ্যত।

একমাত্র যে সম্বল ছিলো

হিরুর বেঁচে থাকার,

কলেরায় সে গরু গেলো

বিপদ বিরাট আকার।

সময় যখন খারাপ আসে

বিধিও হয় বাম,

জলের দরেই স্বর্ণ বেঁচে

তুচ্ছ সোনার দাম।

লোনের টাকা শোধ দিবে হায়

চিন্তায় সে বিহব্বল,

থাকার মধ্যে আছে কেবল

বাড়ি টুকুই সম্বল।

সাবালকের কর্মী এসে

তাগাদা দিয়ে যায়,

টাকা কোথায় টাকা ফেলো

আমরা যে নিরুপায়।

বাধ্য হয়ে হিরু শেষে

বাড়ি বিক্রির টাকায়,

চোখের জলে গুনে গুনে

ধার দেনা সব শোধায়।



★স্বরবৃত্ত.....

প্রতি দিনের মতন  

উঠেছে রবি রতন

সে আলো পৌছেনি হিরুর মনে।

দিবসের চাঞ্চল্য

ছিলো গতকল্য

ভুলে আজ মৃত্যুর ক্ষণ গোনে।

আজি হতে গৃহহীন

যাযাবর তবু স্বাধীন

যানেনা সে যাবে কোনখানে।

শেষ বারের মতো

ঘর বাড়ি যতো

চেয়ে দেখে অপলক ধ্যানে।

পাথর হয়ে হিরু

কথা কয় ভীরু ভীরু

তবু সে বোঝেনা কোন মতে।

বোকচা বিড়ে হাতে

বৌ মেয়ে লয়ে সাথে

বাহির হবে যখন অজানার পথে।

ছোট মেয়ে সে অবুজ

সংসারে নেই বুজ 

পুতুল খেলায় হয়ে আছে মত্ত। 

লাল নীল শাড়িতে 

সাজবে সে বাড়িতে 

হাসবে খেলবে মজা হবে কত্ত।

হিরু বলে চল যাই

এইখানে ঠাই নাই

পুতুলের খেলা করো বন্ধ।

মেয়ে বলে ওরে বাবা

এমন কথা না কবা

পুতুলের সাথে কেনো এতো দ্বন্ধ!

প্রতিবার আমি যখন

বিয়ে করি আয়োজন

ভেঙে দাও সবকিছু বলো কি কারন?

পুতুলের বিয়ে আজ

দেখছোনা কতো সাজ,

আজ আমি শুনবোনা তোমার বারন।

চোখে জল টলমল

শরীর হারায় বল

বসে পড়ে অসহায় মাটিতে।

হয়তোবা এই দেশ

পুতুল খেলার শেষ

জীবনের লাগি তোর হবে হাটিতে।

খেলে নে মা খেলে নে

যতো পারিস যতনে

তোর পুতুলের বিয়ে হোক হাসিতে।

জীবন সংসার

হলো সব ছারখার

হেরে গেছি দুঃখকে নাশিতে।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

Featured Post

মেডেল চাই মেডেল..