বিভাগঃ কবিতা
শিরোনামঃ কালো রাত
অসীম কুমার
১০/০৯/২০১৮
.
গভীর নিশিথে ধরণী জুড়ে
আসিলো হঠাৎ বন্যা,
মেঘের গর্জনে প্রবল স্রোতে
ভাসি আমি যেনো টোপা পানা।
স্রোতের টানে ভেসে ভেসে
উঠিলাম এক গাছের শাখায়,
অজানা একটি মেয়ে
সেও নিয়েছিলো সেথা আশ্রয়।
বিজলীর আবছা আলোতে
হয়েছিলো দৃষ্টি বিনিময়,
মুখ তুলে বলেছিলো
"শক্ত করে ধরো ভয় পেও না
ইশ্বর, সে তো দয়াময়।"
বৃষ্টি অবিরাম মেঘের গর্জন
স্রোতের বেগ বিদ্যুৎ ঝলকানি,
শরীর কাঁপে থর -থর
দেখি যমরাজের হাতছানি।
কোথা গেলো পরিবার
বেঁচে আছে, নাকি গেলো মরে?
ডুকরে ডুকরে কাঁদি আমি
বুকটা ফাঁটে স্বজনের তরে।
একবুক সাহস দিয়ে
কহিলো সে আমারে,
"বিপদে ভেঙ্গে পড়ো না
মন যে শক্তি দেয় শরীরে।
স্রোতের বেগ আসছে কমে
প্রভাত ও খুব নিকটে,
আঁধার ভেঙ্গে ভোরের আলোয়
বিপদ সবই যাবে কেটে।"
আমি কহিলাম, " তুমি একা কেনো
কোথায় তোমার বাসা,
পরিবার ছেড়ে কেনো তোমার
একেলা এমনি আসা?"
আর কোন কথা কহিলো না সে
রইলো নিশ্চুপ,
নামটাও জানা হলো না তার
না জানিলাম পরিচয় না দেখিলাম রূপ।
অবশেষে থামিলো বৃষ্টি
স্রোতের বেগ গেলো কমে,
ধীরে ধীরে ভোরের আলোতে
প্রকৃতি উঠলো ভেসে।
আবছা আলোতে দেখিলাম
শূন্য সে গাছের শাখা
কোথা গেলো সেই মেয়ে
আমারে রাখিয়া একা।
খুঁজিলাম চারি দিক
দৃষ্টি ছুঁড়িয়া,
ডাকিলাম সজোরে
বন্ধু বন্ধু বলিয়া।
মরণ উৎসবে যে বাঁচালো মোরে
শক্তি সাহস দিয়ে,
সুখের আলোতে কোথায় গেলো
সেই মায়বী হারিয়ে।
কেমনে খুঁজিবো তারে
চিনিবো তারে কেমনে?
কোথায় গেলে পাবো দেখা
মিলবো তাহার সনে।
স্কুল কলেজ আশ্রয় কেন্দ্রে
হাজার খুঁজেও পাইনি তারে,
যে আমারে শক্তি সাহস
দিয়েছিলো অকাতরে।
তবে কি সে শুয়ে আছে
ওই লাশের সারিতে,
নাকি স্রোতের টানে
মিশে গেছে নদীতে?
সে কি পেয়েছে খুঁজে
আপন পরিবার,
নাকি সর্বনাশা বন্যা
তাকেও করেছে ছারখার?
শুধু একবার মিলিতে চাই তার সনে,
কোন সে রমণী মহান?
মৃত্যুর মুখে যে আমার
বাঁচিয়েছিলো প্রাণ।
ভোরের আলোতে যে সুখের দোলা
দিয়েছিলো আপন অন্তরে,
নিমিশেই নামলো শোকের ছায়া
অজানা সেই বন্ধুর তরে।
সেই হতে আজো আমি
করি অপেক্ষা,
কোন একদিন নিশ্চয়
পাবো সেই বন্ধুর দেখা।।
0 মন্তব্যসমূহ