**একটি শালিকের ভাবনা**
অসীম কুমার
২৯/০৯/২০১৯
.
আকাশে মেঘ দেখে একটি শালিক
আনন্দে নৃত্য শুরু করেছে।
হিম হিম বাতাস আর পাতার ঝিরি ঝিরি শব্দের তালে সে আজ আত্মহারা।
যেনো দেবালয়ের মেনকা;
ঘুঙ্গুর বাজিয়ে হেলে দুলে গান গাইছে।
পূর্বের কোন সুখস্মৃতি পূনরাবৃত্তির আশায় আনন্দের যেমন সীমা থাকে না!
যেমন আত্মহারা হয় নব বধু প্রাণোনাথের ছুটি আগমনে।
বৃষ্টিতে ভেজার বড্ড শখ তার।
সেইযে গতবার রাখী পূর্ণিমার দিনে পুষ্প বৃষ্টিতে ভিজে রংধনুর রং মেখেছিলো গায়,
তার স্মৃতি আজো হৃদয় পটে জীবন্ত।
বৃষ্টিতে ভিজে লুকোচুরি খেলা,
সে এক দীর্ঘ প্রতিক্ষা।
শুয়ে শুয়ে বিরহী গান গাওয়া,
জানালা দিয়ে বৃষ্টি আচ্ছন্ন ধুয়াশা গ্রামকে দেখা,
পদ্মপাতায় ফোঁটা ফোঁটা জল জমে অবশেষে পড়ে যাওয়া,
নদীতে জলের স্রোতে মাছের লাফিয়ে ডাঙ্গায় ওঠা,
অষ্টাদশীর আঁধ ভেজা কাপড়ে ঘাট থেকে জল নিয়ে যাওয়া,
ব্যাঙ্গের ডাক আর উলুধ্বনিতে আরোব্য সন্ধ্যার আগমন,
যেনো আজ মহা সাধনা সফল হতে চলেছে।
সেই আনন্দে নাচে আর আকাশের পানে চায়,
কখন নামবে বৃষ্টি!
যেন বরের অপেক্ষায় বধু বেসে অপেক্ষমান কিশোরী।
ধীরে ধীরে বৃষ্টি এলো,
শুরু হলো প্রবল মেঘের গর্জন
মুহুর্তেই ধরণী প্রকম্পিত করে বজ্রাঘাতে পুড়িয়ে দিলো সবুজের দেহ।
দমকা হাওয়ায় ভেঙ্গে দিচ্ছে বৃক্ষরাজি।
বৃষ্টির ফোঁটা বন্দুকের গুলির মতো ছিদ্র করে দিয়ে যাচ্ছে পাতার সপ্নিল বুক।
শালিকটা তখন নাচ গান থামিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করছে একটু আশ্রয়ের।
উড়তেও পারছে না, জলে ভেজা শিমুলের মতো ডবডবে তার সূক্ষ্ম দেহ।
ঠান্ডায় রক্ত জমাট বাধতে শুরু করেছে,
ঠোট ফেঁটে আসছেনা কোন শব্দ।
নিজের বাসা তো সেই কখন ভেঙ্গে চুরমার!
বৃষ্টির আনন্দ,তার দ্বিগুন কষ্ট হয়ে দেখা দিয়েছে।
পাষাণ মরুর বুকে পথিকের অমৃত ভেবে গরল পানের মতো।
অসাঢ় দেহের মাথায় তখন নীরবে আসে ভাবনা,
আসে সত্য উপলব্ধি।
প্রকৃতি নিয়মের বাইরে গেলেই আমাদের
বাঁধে প্রাণ নিয়ে শংসয়,
অথচ তাদের মহা আনন্দের মহা উপভোগ্য কিছু।
আমরা যে সমাজের উচ্ছিষ্ট!
আমাদের জন্য বৃষ্টি এক অভিসাপ,
বৃষ্টি যেন উন্মাদ দৈত্য।
বৃষ্টির যতো রূপ রস সৌন্দর্য, তা শুধু ওই দোতলার বাবুদের জন্য।।
0 মন্তব্যসমূহ